ফার্মাসিস্ট কারা?
ফার্মাসিস্টরা হচ্ছেন মূলত স্বস্থ্য পেশাজীবী যারা ওষুধ তৈরি করেন এবং ওষুধের ব্যবহার ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন।
বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের ৩ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে
- ১. গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট (এ গ্রেড)
- ২. ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট (বি গ্রেড)
- ৩. ফার্মেসি টেকনিশিয়ান (সি গ্রেড)
যদিও অন্য কোন দেশে এরকম গ্রেডিং সিস্টেম নেই।বরং সেসব দেশগুলোতে ফার্মাসিস্ট,ফার্মেসি এসিস্ট্যান্ট ও ফার্মেসি টেকনিশিয়ান নামে পদগুলো চিন্হিত করা হয়।
- গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট (এ গ্রেড): একজন এ গ্রেড ফার্মাসিস্ট মূলত ওষুধ তৈরি করে থাকেন। একটি ওষুধ তৈরি করতে কি কি উপাদান ব্যবহার করতে হবে,কতটুকু ব্যবহার করতে হবে এবং সে ওষুধ কীভাবে কতটুকু পরিমাণ প্রয়োগ করলে রোগমুক্তি হবে সেসব নিয়েই মূলত এ গ্রেড ফার্মসিস্টরা পড়াশোনা করেন। তাদের জন্য রয়েছে চার বছর মেয়াদি বি.ফার্ম এবং পাচ বছর মেয়াদি এবি.ফার্ম ডিগ্রী। এছাড়া চাইলে পরবর্তীতে এম.ফার্ম বা মাস্টারসও করা যায়। । এ গ্রেড ফার্মাসিস্টদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। সেখানে কিছু সুনির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া যায় যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে; বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করা। ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার পর ভর্তি হওয়া যায়। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তুলনামূলক সহজ। দেশে বর্তমানে ১৩টি সরকারি ও ২৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখান থেকে ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী নেয়া যায়। একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট অনেক উচ্চ বেতনে বিভিন্ন কোম্পানী, হাসপাতাল বা ফার্মেসিতে জব পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশে প্রায় ১৯ হাজার রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট রয়েছে এবং প্রতিবছরই কয়েক হাজার গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বের হচ্ছেন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে।সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এ গ্রেড ফার্মাসিস্টদের অনেক চাহিদা রয়েছে। উন্নত বিশ্বে এ গ্রেড ফার্মাসিস্টরা এমবিবিএস ডাক্তারদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন। একটি দেশের ওষুধ শিল্পে এ গ্রেড ফার্মাসিস্টদের অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে এ গ্রেড ফার্মাসিস্টদের তেমন মূল্যায়ন করা হয়না। ফলে উচ্চ বেতন ও সঠিক মূল্যায়ন পাওয়ার আশায় অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমান।
- ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট (বি গ্রেড): ডিপ্লোমা বা বি গ্রেড ফার্মাসিস্ট হতে হলে ৩ বছরের একটি কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। এর সাথে রয়েছে ৬ মাসের ইন্টার্নশীপ। মাধ্যমিক (এসএসসি) বা সমমানের পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানসহ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উর্ত্তীণ যে কেউ ডিপ্লোমা-ইন-ফার্মেসি কোর্স ভর্তি হতে পারবে ।বি গ্রেড ফার্মাসিস্ট কোর্স করার জন্য ১১ টি সরকারি এবং ৪০ টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্মানে বাংলাদেশে প্রায় ৫৮০০ বি গ্রেড ফার্মাসিস্ট রয়েছে।
- ফার্মেসি টেকনিশিয়ান (সি গ্রেড): ফার্মেসি কাউন্সিল অফ বাংলাদেশ (পিসিবি) এর অধীনে পরিচালিত তিন মাস মেয়াদী সি গ্রেড ফার্মাসিস্ট কোর্স বা ফার্মেসি রেজিট্রেশন কোর্স যারা সম্পন্ন করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তারাই মূলত সি গ্রেড ফার্মাসিস্ট। বাংলাদেশে বর্তমানে অসংখ্য তরুণ সি গ্রেড ফার্মাসিস্ট হিসেবে নিজেদের ক্যারিয়ার গঠন করছে। প্রতি বছর তিনটি ব্যাচ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য ২০২১-২২ দুই বছরে মাত্র দুটি ব্যাচ শেষ হয়েছে। ফলে এখন ভর্তি নিয়ে ব্যাপক প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি জেলায়ই সি গ্রেড ফার্মাসিস্ট কোর্স করা যায়। প্রতিটির জেলার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট আসন সংখ্যা। সি গ্রেড ফার্মাসিস্ট কোর্স করতে চাইলে অনলাইনে http://www.pcb.gov.bd এই সাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারিকে অবশ্যই মাধ্যমিক পাশ হতে হবে। বাংলাদেশে সি গ্রেড ফার্মাসিস্টের সংখ্যা বর্তমানে ১৪৮০০০ হাজার।